কসমিক ক্যালেন্ডার
কসমিক ক্যালেন্ডার হলো মহাবিশ্বের কালক্রম বোঝার একটি মাধ্যম, যেখানে মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছরের সুবিশাল সময়কে ৩৬৫ দিনে পরিমাপ করা হয়।
আমরা এখনও সঠিক জানি না সেই প্রথম মুহুর্তে সঠিক কি হয়েছে। যদিও বর্তমানের অবজারভেশনে অনেক তথ্যই জানা সম্ভব হয়েছে। মহাবিশ্বের ১০-৩৫ সেকেন্ডের পর থেকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বিগ হিস্ট্রির শুরুটা হয়েছে বিগব্যাং দিয়ে।
মহাবিশ্বের কালক্রমের বিষয়টি কার্ল সেগানের “The Drogons of Eden” বইটির মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়। তার বিখ্যাত টেলিভিশন সিরিজ “Cosmos Personal voyage” এর মাধ্যমে জন সাধারণ পরিচিত হয়। আর নীল টাইসনের 'Cosmos Space time odyssey' এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন ঘটে।
কার্ল সেগান কসমিক ক্যালেন্ডারকে ফুটবল মাঠের সমান পৃষ্ঠের সাথে তুলনা করেন, যেখানে শুরুটা বিগব্যাংয়ের মাধ্যমে এবং শেষের ক্ষুদ্র একটি স্থান যা মহাবিশ্বের সময়কালের তুলনায় কিছুই না। এটা মূলত মানবজাতির ইতিহাস, যাবৎকালে যতকিছু করেছে তারা তা সেই ক্ষুদ্র সময়ে লিপিবদ্ধ।
বিগ হিস্ট্রিঃ
মানুষের ইতিহাসের বাহিরে বিশাল এক ইতিহাস রয়েছে। একেবারে শুরুর গল্পে রয়েছে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাস, আমাদের পৃথিবী এবং এর মধ্যের জীবন। এই ইতিহাস সম্পর্কে একেক যুগে একেক ধরণের গল্প বা ধারণা ছিল। সেখানে বিগ হিস্টোরি হলো বিজ্ঞান সম্পর্কিত ইতিহাসের গল্প। বিগ হিস্টোরি আমাদের পাওয়া সমস্ত তথ্য ব্যবহার করে মহাবিশ্বের গল্প সমুহকে জানতে সাহায্য করে। আজকের আলোচনাও মূলত এই বিগ হিস্টোরি বেইজড।
কসমিক বছরঃ
কসমিক ক্যালেন্ডার দেখায় মহাবিশ্বের সুবিশাল সময়কাল সম্পর্ক এবং পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বারো মাসে, ৩৬৫ দিন, এক বছরে দেখান হয়।
বিগব্যাং জানুয়ারির ১ তারিখে মাঝরাতে শুরু হয় এবং বর্তমান সময় ৩১শে ডিসেম্বরের মাঝরাতের একটু আগের সময়। এই স্কেল এ ৪৩৭ বছর হল প্রতি সেকেন্ড, ১.৫৭৫ মিলিয়ন বছর হল প্রতি ঘন্টা এবং ৩৭.৮ মিলিয়ন বছর হল প্রতি দিন।
সৃষ্টিতত্ত্ব (Cosmology)
[১৩.৮- ৪.৪ বিলিয়ন বছর]
ব্যাপ্তিকালঃ
১৩.৮ বিলিয়ন বছরে শুরু – ৪.৪ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত।
বিগব্যাং থেকে পৃথিবীর প্রথম পাথর সৃষ্টির সময় পর্যন্ত অতিবাহিত সময়কাল কসমিক সময় সারণির বিশাল একটা অংশ। এটা প্রাথমিক পর্যায় –
১ই জানুয়ারীঃ
বিগব্যাংঃ (১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে)
প্রাথমিক অবস্থায় মহাবিশ্ব একটি অত্যন্ত ক্ষু্দ্র, ঘনত্বের বস্তু ছিল। যার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আজকের মহাবিশ্বের শুরু হয়।
১৪ই জানুয়ারিঃ
গামা রে ব্লাস্টঃ (১৩.১ বিলিয়ন বছর আগে)
এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে পুরোনো গামা-রে ব্লাস্ট।
২২শে জানুয়ারিঃ
প্রথম গ্যালাক্সিঃ (১২.৮৫ বিলিয়ন বছর আগে)
প্রথম গ্যালাক্সির ডিক্স গঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়।
১৬ই মার্চঃ
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিঃ (১১ বিলিয়ন বছর আগে)
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির এই সময়ে গঠিত হয়েছে।
১২ই মেঃ
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ডিক্স গঠনঃ (৮.৮ বিলিয়ন বছর আগে)
বর্তমান গ্যালাক্সির যে আকৃতি এবং নক্ষত্র গঠনের শুরু হয়েছিল এই ডিক্স গঠনের মাধ্যমে।
২ই সেপ্টেম্বরঃ
সৌরজগতের গঠনঃ (৪.৫৭ বিলিয়ন বছর আগে)
সুর্যের ডিক্স গঠনের সাথে গ্রহ তৈরীর প্রক্রিয়াও শুরু হয়।
৬ই সেপ্টেম্বরঃ
পৃথিবীতে প্রথম পাথরঃ (৪.৪ বিলিয়ন বছর আগে)
পৃথিবীতে পাওয়া প্রথম পাথরের বয়স। যার মাধ্যমে পৃথিবীর বয়স নির্ধারণ করা হয়।
পৃথিবীতে জীবনের বিবর্তন (Evolution of life on Earth)
[৪.১- ০.০৬৫ বিলিয়ন বছর]
ব্যাপ্তিকালঃ
৪.১ বিলিয়ন বছরে শুরু – ৬৫ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। এই সময়ে প্রথম প্রাণের উদ্ভব হওয়া সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার। হয়তোবা পৃথিবীর মতো পরিবেশে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও এমন প্রাণের উদ্ভব হয়েছে।
১৪ই সেপ্টেম্বরঃ
প্রথম বায়োটিক জীবনের উদ্ভবঃ (৪.১ বিলিয়ন বছর আগে)
প্রথম জানা বায়োটিক জীবন যা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ৪.১ বিলিয়ন বছর পূর্বের পাথরে ছিল।
২১শে সেপ্টেম্বরঃ
প্রথম জীবনঃ (৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে)
প্রক্যারিওট্যাসের উদ্ভব।
৩০শে সেপ্টেম্বরঃ
ফটোসিনথেসিসঃ (৩.৪ বিলিয়ন বছর আগে)
দেহে খাদ্য তৈরীর প্রক্রিয়ার গঠন।
২৯শে অক্টোবরঃ
অক্সিজেনঃ (২.৪ বিলিয়ন বছর আগে)
বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের উপস্থিতি।
৯ই নভেম্বরঃ
জটিল কোষঃ (২ বিলিয়ন বছর আগে)
ইউক্যারিওটিক প্রথম জটিল কোষীয় জীব।
৫ই ডিসেম্বরঃ
বহু কোষীয় জীবঃ (৮০০ মিলিয়ন বছর পুর্বে)
প্রথম বহুকোষীয় প্রাণীর উদ্ভব।
৭ই ডিসেম্বরঃ
সাধারণ জীবঃ (৬৫০ মিলিয়ন বছর পুর্বে)
প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীব।
১৪ই ডিসেম্বরঃ
আর্থোপডঃ (৫৫০ মিলিয়ন বছর পুর্বে)
পোকামাকড়দের পূর্বপুরুষ, অ্যারাকনিডসের উদ্ভব।
১৭ই ডিসেম্বরঃ
মাছ জাতীয় প্রাণীঃ (৫০০ মিলিয়ন বছর পুর্বে)
মাছ ও ফটো-এম্পিবিয়ান জাতীয় প্রাণীর উদ্ভব।
২০শে ডিসেম্বরঃ
উদ্ভিদের উদ্ভবঃ (৪৫০ মিলিয়ন বছর পুর্বে)
ভূমিতে উদ্ভিদ/বৃক্ষের উদ্ভব। এবং ওরডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান এক্সটিশন ইভেন্ট এই সময় হয়।
২১শে ডিসেম্বরঃ
পোকামাকড় ও বীজের উদ্ভবঃ (৪০০ মিলিয়ন বছর আগে)
প্রথম পোকামাকড় ও বীজের উদ্ভব হয় এই সময়।
২২শে ডিসেম্বরঃ
অ্যাম্ফিবিয়ানের উদ্ভবঃ (৩৬০ মিলিয়ন বছর আগে)
প্রথম কার্ডাটা প্রাণীর উদ্ভব এবং লেট ডেভোনিয়ান এক্সটিংশন এই সময় হয়।
২৩শে ডিসেম্বরঃ
রেপটাইলের উদ্ভবঃ (৩০০কোটি বছর আগে)
আদি উভচর প্রাণীদের উদ্ভব।
২৪শে ডিসেম্বরঃ
ফার্মিয়ান-ট্রায়াসিক এক্সটিংসনঃ (২৫০ মিলিয়ন বছর পুর্বে)
এই সময় ৫৭% প্রাণী গোষ্ঠী এবং প্রায় ৮৩% প্রাণী মারা যায়।
২৫শে ডিসেম্বরঃ
ডাইনোসরঃ (২৩০ মিলিয়ন বছর পুর্ব)
প্রথম ডাইনোসরদের উদ্ভব।
২৬শে ডিসেম্বরঃ
স্তন্যপায়ীদের উদ্ভবঃ (২০০ মিলিয়ন বছর পুর্ব)
প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব এবং ট্রায়াসিক - জুরাসিক এক্সটিংশন ইভেন্ট হয়।
২৭শে ডিসেম্বরঃ
পাখির উদ্ভবঃ (১৫০ মিলিয়ন বছর পুর্বে)
ডাইনােসর জাতীয় পাখির উদ্ভব।
২৮শে ডিসেম্বরঃ
ফুলের উদ্ভবঃ (১৩০ মিলিয়ন বছর পুর্ব )
প্রথম ফুলের উদ্ভব ।
৩০ ডিসেম্বরঃ
ক্রিটাসিয়াস - পেলিজেনি এক্সটিংশনঃ (৬৫ মিলিয়ন বছর আগে)
এই এক্সটিংশনে সকল নন - এভিয়ান ডাইনােসরের মৃত্যু হয়। এভিয়ানদের থেকে বর্তমান পাখি এসেছে।
মানুষের উদ্ভবঃ ( Human Evolution )
[৬৫ - ০.০১২মিলিয়ন বছর]
ব্যাপ্তিকালঃ
৬৫ মিলিয়ন বছরে শুরু – ১২ হাজার বিসি পর্যন্ত
মানুষের ইতিহাস প্রায় ২ লক্ষ বছরের। এই সময়টুকু কসমিক টাইম স্কেলে কিছু মুহুর্ত মাত্র। তাছাড়া বিবর্তনীয় ধারায় মানুষের ইতিহাস আরও পুরােনাে বলে জানা যায়।
৩০শে ডিসেম্বরঃ
প্রাইমেটের উদ্ভবঃ (৬৫ মিলিয়ন বছর আগে)
ম্যামাল জাতীয় প্রাণীদের উদ্ভব ।
৩১শে ডিসেম্বর, সকাল ০৬:০৫ এ
এপসদের উদ্ভবঃ (১৫ মিলিয়ন বছর পুর্ব)
বানর / শিম্পাঞ্জি জাতীয় প্রাণীর উদ্ভব ।
৩১শে ডিসেম্বর, রাত ১০:২৪ এ
হােমােনয়েডের উদ্ভবঃ ( ১২ মিলিয়ন বছর আগে)
মানুষের আদিপুরুষ হোমিনিডের উদ্ভব।
৩১শে ডিসেম্বর, রাত ১১:২৪ এ
প্রিমিটিভ মানুষদের উদ্ভবঃ (২.৫ মিলিয়ন বছর আগে)
আদি মানুষের উদ্ভব এবং পাথরের ব্যবহার শুরু।
৩১শে ডিসেম্বর, রাত ১১:৪৪ এ
আগুনঃ (৪ লক্ষ বছর আগে)
মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখে।
৩১শে ডিসেম্বর, রাত ২৩:৫২ এ
মানুষঃ (২ লক্ষ বছর)
আধুনিক মানুষের যাত্রা শুরু।
৩১শে ডিসেম্বর, রাত ২৩:৫৫ এ
সর্বশেষ বরফের যুগ শুরুঃ (১.১ লক্ষ বছর আগে)
পৃথিবীর বরফের স্তর বাড়তে থাকে ।
৩১শে ডিসেম্বর, রাত ২৩:৫৮ এ
অঙ্কনঃ (৩৫ হাজার বছর আগে)
ভাষ্কর্য ও পাথরে অঙ্কন এই সময়ে শুরু হয় (বর্তমানে ৭৫০০০ বছর পূর্বের অঙ্কন পাওয়া গেছে, সুত্র: নেচার)।
৩১শে ডিসেম্বর, রাত ২৩:৫৯:৩২ এ
কৃষিঃ (১২ হাজার বছর আগে)
মানুষ কৃষি কাজ শুরু করে।
মানব ইতিহাসের শুরু (History begins)
[১২-১হাজার বছর ]
ব্যাপ্তিকালঃ
১২ হাজার বিসি শুরু- ২০০০ সাল পর্যন্ত
মানব ইতিহাস এ যত কিছু হয়েছে, আমরা যত কিছু বিস্তারিত জানি তা ৩১ ডিসেম্বরের এই ক্ষুদ্র সময়টাতে হয়েছে। যুদ্ধ, ধর্ম, ন্যায়, অন্যায় সব এইটুকু সময়ে হয়েছে। সময়টা কসমিক স্কেল এর এক ঘন্টাও নয়, বরং এক মিনিটেরও অর্ধেক। মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা কতােটা ক্ষুদ্র তা উপলব্ধি করা যায় টাইম স্কেলের নিজেদের ক্ষুদ্রতা লক্ষ্য করে।
এখন যে-টুকু লেখা হবে তা ৩১শে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ রাত ১১টা এবং ৫৯ মিনিট নিয়ে। আমরা আছি মানব সভ্যতার দারপ্রান্তে।
৫৯:৩২ মিনিট,
আইস এজ শেষঃ (১২ হাজার বছর আগে)
ইতিহাসের শেষ বরফের যুগ এটি।
৫৯:৪১ মিনিট,
বন্যাঃ (৮.৩ হাজার বছর পুর্ব)
ডগার ল্যান্ড বা ইউরােপীয় অঞ্চলে বন্যা।
৫৯:৪৬ মিনিট,
তাম্রযুগঃ (৬ হাজার বছর আগে)
তামা ব্যবহার শুরু হয়।
৫৯:৪৭ মিনিট,
ব্রোঞ্জ যুগঃ (৫.৫ হাজার বছর আগে)
প্রাথমিক ব্রোঞ্জ যুগ, প্রথম যােগাযােগের জন্য সংকেত বা ভাষার ব্যবহার।
৫৯:৪৮ মিনিট,
সভ্যতার শুরুঃ (৫ হাজার বছর আগে)
মিশরের সভ্যতা, ইন্দু সভ্যতা, সুমেরিও সভ্যতার শুরু।
৫৯:৪৯ মিনিট,
সভ্যতার উপহারঃ ( ৪.৫ হাজার বছর আগে)
লিখন পদ্ধতির শুরু, চাকার আবিষ্কার , আক্কাদিন সাম্রাজ্যের শুরু।
৫৯:৫১ মিনিট,
মিশরঃ (৪ হাজার বছর আগে)
হাম্মারুবির কোড, মধ্য মিশরের সভ্যতা।
৫৯:৫২ মিনিট,
লােহার ব্যবহারঃ (৩.৫ হাজার বছর আগে)
ব্রোঞ্জ যুগের অবসান এবং লৌহ যুগের শুরু।
৫৯:৫৪ মিনিট,
মহাপুরুষদের আবির্ভাবঃ ( ২.৫ হাজার বছর পুর্ব)
গৌতম বুদ্ধ, মাহাভিরা, জরাথুস্ট, কনফুসিয়া, গ্রিস সভ্যতা, এশােক এর সভ্যতা, বেদ লিখা, ইউক্লিডের জ্যামিতি , আর্কিমিডিসের ফিজিক্স, রােমান সভ্যতা।
৫৯:৫৫ মিনিট,
সভ্যতাঃ (২ হাজার বছর পুর্ব)
পটোলেমিক জোর্তিবিদ্যা, রােমান স্ৰামাজ্য, জিসুস। ক্রাইস্ট, ০ এর উদ্ভাব, গুপ্ত সামাজ্য।
৫৯:৫৬ মিনিট,
সভ্যতাঃ (১.৫ হাজার বছর আগে)
মুহাম্মাদ (সা.) এর জন্ম, বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের উত্থান, মুসলিম সভ্যতার বিকাশ।
৫৯:৫৮ মিনিট,
সভ্যতাঃ (হাজার বছর আগে)
মুঘল সাম্রাজ্য, মারাঠা সাম্রাজ্য, ক্রুসেড, কলম্বাসের প্রথম আমেরিকা যাত্রা, রেনেসাস।
আর বর্তমান সেকেন্ডঃ
যেখানে আমি, আপনি আর শেষ কসমিক সেকেন্ডের ৪৩৭.৫ বছরের সময় চলছে। বর্তমান যেটা বর্তমান সময় বা বিজ্ঞানের যুগ নামে পরিচিত ।
ভবিষ্যৎ এর পৃথিবী (Future world)
প্রথম কসমিক বছরের সমাপ্তি এখানেই। এখন আমরা ভবিষ্যতের পৃথিবী দেখব। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের আলোকে কিছু হাইপোথিসিস দ্বার করিয়েছেন, যেটা ভবিষ্যতে ঘটার সম্ভবনা আছে। তবে হাইপোথিসিসগুলো তথ্যের আলোকে পরিবর্তন হতে পারে।
এখন দ্বিতীয় কসমিক ইয়ারে যা হতে পারে তা জানব-
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:০০:০১ , অ্যানথ্রোপসিন যুগঃ (৫০০ বছর পর)
যখন থেকে মানবসৃষ্ট কারণে পরিবেশের পরিবর্তন হতে শুরু করেছে, সময়ের হিসাব বা পরিমাপের একক।
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:০০:২৩,
তারকার বিস্ফোরণঃ (১০ হাজার বছর পর)
এন্ট্রারেস তারকার সুপার নােভা বিস্ফোরণ।
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:০০:৫০ , চেরেনােবিলঃ (২০ হাজার বছর পর)
চেরনােবিল পুনরায় নিরাপদ স্থান হবে।
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:০০:৫৭,
আরিসিবাে ম্যাসেজ পৌছানােঃ (২০ হাজার বছর পর)
আরিসিবাে ম্যাসেজ M13 ক্লাস্টারে পৌছাবে যা ১৯৭৪ সালে প্রেরণ করা হয়েছিল।
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:০১:৫৪,
নায়াগ্রা ফলসঃ (৫০ হাজার বছর পর)
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের পানি প্রবাহ চিরদিনের জন্য বন্ধ হবে।
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:০৩:৪৮, নক্ষত্রপুঞ্জের পরিবর্তনঃ (১ লক্ষ বছর পর)
সঠিক গতিপথ আকাশের থাকা নক্ষত্রের চিত্র সম্পূর্ন পরিবর্তন হয়ে যাবে।
১ই জানুয়ারী রাত ১২:১১:২৪,
নক্ষত্রের বিস্ফোরণঃ (৩ লক্ষ বছর পর)
পৃথিবী থেকে ৭৫০০ আলােকবর্ষ দুরের তিনটা তারা WR 104 বিস্ফোরণ ঘটবে।
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:১৯:০২, এস্ট্রোরয়েডঃ (৫ লক্ষ বছর পর)
পৃথিবীতে ১কি.মি. এস্ট্রোরয়েড আঘাত হানার আশংকা।
১ই জানুয়ারী, রাত ১২:৩৮:০৫
পিরামিডঃ (১ মিলিয়ন বছর পর)
গিজার পিরামিড সম্পুর্নরুপে নিশ্চিহ্ন হবে।
১ই জানুয়ারী, ভাের ০৪:৩৪,
মাউন্ট রাসমােরঃ (৭.২ মিলিয়ন বছর পর)
মাউন্ট রাসমাের সম্পুর্নরুপে নিশ্চিহ্ন হবে।
১ই জানুয়ারী, বিকাল ০৪:৩০,
আফ্রিকা বিভক্তঃ (২০ মিলিয়ন বছর পর)
পুর্ব আফ্রিকা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। (রিসেন্ট রিসার্চ মতে এমনটা নাও হতে পারে)
২ই জানুয়ারী,
ইউরােপ আফ্রিকার সংঘর্ষঃ (৫০ মিলিয়ন বছর পর)
ভুমধ্যসাগর ছােটো হয়ে যাবে ইউরােপ ও আফ্রিকা মহাদেশের সংঘর্ষের ফলে।
৩ই জানুয়ারী,
শনির রিংঃ (১০০ মিলিয়ন বছর পর)
শনি তার রিং হারিয়ে ফেলবে।
৫ই জানুয়ারী,
১ ঘন্টা বৃদ্ধিঃ (১৮০ মিলিয়ন বছর পর)
পৃথিবীর সময়কাল এক ঘন্টা বেড়ে ২৫ ঘন্টায় দিন হবে।
৭ই জানুয়ারী,
গ্যালাক্টিক ইয়ার সম্পুর্নঃ (২৪০ মিলিয়ন বছর পর)
সৌরজগত গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে একবার প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করবে।
৮ই জানুয়ারী,
নতুন মহাদেশঃ (২৫০ মিলিয়ন বছর পর)
নতুন বৃহৎ মহাদেশ তৈরীর সম্ভাবনা।
১৬ই জানুয়ারী,
সুর্যগ্রহণঃ (৬০০ মিলিয়ন বছর পর)
সুর্যগ্রহণ আর কোনােদিন হবে না।
১৭ই জানুয়ারী,
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সংকটঃ (৭০০ মিলিয়ন বছর পর)
বায়ুমন্ডলে কাবন-ডাই-অক্সাইড এত কম হবে যে, সালােকসংশ্লেষণ অসম্ভব হয়ে যাবে এবং সকল জটিল কোষী জীবের মৃত্যু ঘটবে।
৮ ই ফেব্রুয়ারী,
মহাসমুদ্রঃ (১ বিলিয়ন বছর পর)
পৃথিবীর সাগরের সকল পানি শুকিয়ে যাবে।
১ই মার্চ,
মৃত্যুঃ (২ বিলিয়ন বছর পর)
পৃথিবীতে থাকা সকল প্রাণের মৃত্যু।
৯ই এপ্রিল,
সংঘর্ষঃ (৩ বিলিয়ন বছর পর)
আকাশগঙ্গা এবং এন্ডােমিডা গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ।
৯ই এপ্রিল,
রেড জায়ান্টঃ (৪ বিলিয়ন বছর পর)
সুর্য লাল দানবে পরিনত হবে।
১৬ এপ্রিল,
উত্তাপঃ (৪ বিলিয়ন বছর পর)
পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা হবে ১৩৩০ ° সেলসিয়াস, যা লেড গলিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
২৮ই জুলাই,
পৃথিবীর ধ্বংসঃ (৭.৯ বিলিয়ন বছর)
সুর্য রেড জায়ান্টে পরিনত হওয়ার পর আকার এত বড়ো হবে যে তা পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলবে।
১২ই আগষ্ট,
শ্বেত বামনঃ (৮ বিলিয়ন বছর পর)
সূর্য শ্বেত বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে।
৩১শে ডিসেম্বর,
সৌরজগতের সমাপ্তিঃ (১২ বিলিয়ন বছর পর)
সৌরজগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
মহাজাগতিক ঘটনা:
ভবিষতে ঘটা মহাজাগতিক ঘটনাগুলাে অনেকটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলাের উপর ভিত্তি করে দেওয়া।
এখানে ৩ কসমিক বছর বা ২৯.৪ বিলিয়ন বছর পরের ঘটনাগুলাে রয়েছে-
৮ম কসমিক বছর, ১ই এপ্রিল,
গ্যালাক্সি দৃষ্টির বাহিরেঃ (১০০ বিলিয়ন বছর)
গ্যালাক্সিগুলি আলাের চেয়ে বেশি বেগে পরস্পর থেকে দূরে চলে যাবে।
৭২৪৭তম কসমিক বছর, ১৩ ডিসেম্বর, নতুন তারার সমাপ্তিঃ (১০০ ট্রিলিয়ন বছর পর)
নতুন কোনাে তারা তৈরি হবে না।
৭২,৪৭৯ তম কসমিক বছর, ১১ জুলাই, ঠান্ডা সূর্যঃ (১ কোয়াড্রিলিয়ন বছর পর)
সূর্যের তাপমাত্রা -২৬৮° সেলসিয়াস হবে।
৭.৯৪*১০৩৫ তম কসমিক বছর,
ব্লাক হােলের যুগঃ (৩*১০৪৩ বছর পর)
মহাবিশ্বে ব্লাক হােল বাদে আর কোনাে বস্তু থাকবে না।
৪.৫৪*১০৯৮ তম কসমিক বছর,
শেষ ব্লাকহোলের বিলুপ্ত শুরু হবে।
১০১০০ তম কসমিক বছর,
মহাবিশ্বে শক্তি খুবই কম থাকবে এবং ডার্ক ইরার শুরু হবে।
১০১৫০০ কসমিক বছর পর,
লৌহ নক্ষত্রঃ
লোহ নির্মিত নক্ষত্র গঠন।
১০১০৭৬ কসমিক বছর পরঃ
ব্লাক হােলঃ
শেষ ব্লাকহােলের সমাপ্তি বা ধ্বংস হয়ে যাবে।
১০১০১২০ কসমিক বছর পরঃ
শেষ এন্ট্রপি স্টেটঃ
সর্বশেষ এন্ট্রপি স্ট্রেট। মহাবিশ্বের শেষ অবস্থা।
১০১০১০৫৬ কসমিক বছর পরঃ
পুনরায় বিগব্যাং ঘটার সম্ভবনা।
শুরুটা হয়েছিল কার্ল সেগানের বিখ্যাত ডকুমেন্টারী কসমস দিয়ে। শেষটাও তাকে দিয়েই। যারা "cosmos the space time odyssey" দেখেছিলেন তারা শেষ পর্বে কার্ল সেগানের বিখ্যাত সেই উক্তি শুনেছিলেন। ১৯৯০ এর ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে ভয়েজার-১ এর বিখ্যাত 'Perl blue dot' ছবির (ওপরের ছবিটা) সম্পর্কে মন্তব্যটি এখানে দেওয়া হলো। মানবজাতি আসলেই কতোটা ক্ষুদ্র এই মহাবিশ্বের তুলনায় তা স্পষ্ট বোঝা যায় ছবি ও তার মন্তব্য থেকে।
"Look again at that dot. That's here. That's home. That's us. On it everyone you love, everyone you know, everyone you ever heard of, every human being who ever was, lived out their lives. The aggregate of our joy and suffering, thousands of confident religions, ideologies, and economic doctrines, every hunter and forager, every hero and coward, every creator and destroyer of civilization, every king and peasant, every young couple in love, every mother and father, hopeful child, inventor and explorer, every teacher of morals, every corrupt politician, every "superstar," every "supreme leader," every saint and sinner in the history of our species lived there--on a mote of dust suspended in a sunbeam.
The Earth is a very small stage in a vast cosmic arena. Think of the rivers of blood spilled by all those generals and emperors so that, in glory and triumph, they could become the momentary masters of a fraction of a dot. Think of the endless cruelties visited by the inhabitants of one corner of this pixel on the scarcely distinguishable inhabitants of some other corner, how frequent their misunderstandings, how eager they are to kill one another, how fervent their hatreds.
Our posturings, our imagined self-importance, the delusion that we have some privileged position in the Universe, are challenged by this point of pale light. Our planet is a lonely speck in the great enveloping cosmic dark. In our obscurity, in all this vastness, there is no hint that help will come from elsewhere to save us from ourselves.
The Earth is the only world known so far to harbor life. There is nowhere else, at least in the near future, to which our species could migrate. Visit, yes. Settle, not yet. Like it or not, for the moment the Earth is where we make our stand.
It has been said that astronomy is a humbling and character-building experience. There is perhaps no better demonstration of the folly of human conceits than this distant image of our tiny world. To me, it underscores our responsibility to deal more kindly with one another, and to preserve and cherish the pale blue dot, the only home we've ever known."
— Carl Sagan, Pale Blue Dot, 1994
সোর্স:
১.
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cosmic_Calendar
২.
https://solarsystem.nasa.gov/resources/536/voyager-1s-pale-blue-dot/
৩.
বিগ হিস্টোরি নিয়ে কোর্সেরার ফ্রী কোর্সটি করতে চাইলে- https://www.coursera.org/lecture/big-history/big-history-framework-david-christian-what-is-big-history-mIsGT
আবার খান একাডেমিতেও পাবেন-
৪.
http://palaeos.com/time/cosmic_calendar.html
৫.
এছাড়াও "Cosmos" এর সবগুলো সিরিজ।
রওনক শাহরিয়ার,
আগষ্ট, ২০২০