Space telescope এর কিছু কথা

   


হাকাশ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। আদি ও মধ্য যুগে তারার ওপর নির্ভর করা জীবনের অংশ ছিল। তাদের যাত্রা, ফসল, বাসস্থানসহ বিভিন্ন কাজে নির্ভর করত। বর্তমানে অনেক কিছুই বদলে গেছে, এখন মানুষের আগ্রহ তারাদের ছাড়িয়ে মহাবিশ্বের গভীরে প্রবেশ করেছে। প্রতিনিয়ত আমরা নিত্যনতুন কোনো অবজারভেশনের কথা জানতে পারছি, সেটা ব্লাকহোল প্রথম ছবি বা দূরতম গ্যালাক্সির খোঁজ বা সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোলের সন্ধান।



এই চমৎকার সব আবিষ্কারের জন্য বা পর্যবেক্ষণের জন্য আদিকাল ও মধ্যযুগে অবজারভেটরি বা পর্যবেক্ষণাগার গড়ে তোলা হয়। 

অবজারভেশন পুর্বে তারার ওপর নির্ভর করে সব করা হলেও, বর্তমানের উদ্দেশ্য অনেকটাই ভিন্ন।

বর্তমানের প্রযুক্তিগত উন্নতি গ্যালিলিও এর হাত ধরে এসেছিল। তিনি পৃথিবীর বাহিরের প্রকৃতি জানার চেষ্টা করেছিলেন তার ছোট্ট টেলিস্কোপ দিয়ে, যদিও টেলিস্কোপের আবিষ্কারক তিনি নন। তাও শনির বলয়, বৃহস্পতির চাঁদ, মিল্কিওয়ের নক্ষত্রসমুহ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, এবং ততকালীন মতের বিপক্ষে গিয়ে নিজের যুগান্তকারী মত প্রকাশ করেছিলেন। তার পর থেকে রেনেসাসের মাধ্যমে বিজ্ঞানের ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সময়ের সাথে টেলিস্কোপের আকার, জটিলতা ও ক্ষমতার বৃদ্ধি পায়। এগুলো শহর থেকে দূরে এবং যতটা সম্ভব ওপরে তৈরীর চেষ্টা করা হয়। বর্তমানের সকল অবজারভেটরিতে বিশাল আকারের টেলিস্কোপ রয়েছে। অবজারভেটরি কয়েক প্রকার হলেও মহাকাশে দৃষ্টি রাখার উপায় দুটো। ভুমি বা পৃথিবী থেকে এবং পৃথিবীর বাহিরে থেকে বা মহাকাশ থেকে। বর্তমানে চায়না, পেরু, ইউএস, অ্যান্টার্কটিকাসহ বিভিন্ন দেশে বৃহৎ আকৃতির অবজারভেটরি রয়েছে। ভুমি থেকে আকাশে দৃষ্টি রাখা সহজ, স্বল্প ব্যয় এবং ডেটা স্থানান্তর সহজ। আর স্পেস থেকে পর্যবেক্ষণ করা কিছু কঠিন,  স্পেস সাটলে পাঠানো ও সবসময় নজরদারিতে রাখতে হয়। অত্যাধিক খরচ, ডেটা সংগ্রহসহ বিভিন্ন কারণে স্পেস -এ পর্যবেক্ষণাগার এখনও কম।



যদি পৃথিবীতে বৃহৎ আকৃতির অবজারভেটরি বানানো সম্ভব হয় তবে মহাকাশে টেলিস্কোপ পাঠানোর কী দরকার!

মূলত এর জন্য দ্বায়ী আমাদের বায়ুমণ্ডল। প্রথমত জনবহুল এরিয়াতে লাইট পলিউশন, বায়ু দূষণের জন্য ছবির সার্পনেস সীমাবদ্ধ হয়ে যায় (বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বায়ুর আলোরনের জন্য মূলত রাতের তারা জ্বলজ্বল করে আর স্পেস এ স্পষ্ট দেখা যায়)। এবং মেঘ ও বৃষ্টি অবজারভেশনে বড়ো বাধা তৈরী করে।

আবার, ওজোন লেয়ার ইনফ্রারেড ও আল্টাভায়োলেট রে  অনেকটাই শোষণ করে যা স্পেস টেলিস্কোপ সহজে ডিটেক্ট করতে পারে। যদিও ভুমিস্থ টেলিস্কোপগুলো উন্নত করা হয়েছে এবং আকারে বিশাল তবুও থার্মোস্ফিয়ারে আটকে যাওয়া কোনো তরঙ্গ সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। স্পেস টেলিস্কোপ এসব থেকে মুক্ত, তাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার চিত্র সমুহ এখান থেকেই পাওয়া সম্ভব হয়েছে। 





স্পেস টেলিস্কোপের ধারণাটা একেবারেই নতুন। সর্বপ্রথম ১৯৪০ সালে এমন টেলিস্কোপের প্রস্তাবনা রাখা হয়। ১৯৪৬ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে একটি রিসার্চ পেপার বের হয় যেখানে অস্ট্রোনমিতে স্পেস থেকে পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও বড়ো আকারের স্পেস টেলিস্কোপ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। যে সময়ে কোনো স্যাটেলাইটও অরবিটে পাঠানো সম্ভব হয় নি। ১৯৬৯ সালে বৈজ্ঞানিকভাবে বড়ো স্পেস টেলিস্কোপ এর সুবিধা সম্পর্কিত পেপার পাবলিশ হলে প্রথম টেলিস্কোপ এর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তারপর থেকে অস্ট্রোফিজিস্ট ও ইঞ্জিনিয়াররা একযোগে বিশাল আকারের অবজারভেটরি নিমার্ণের কনসেপ্ট, বাজেট, স্পেসক্রাফটে পাঠানোর উপায় নির্ধারণ করেন। আমেরিকা সরকারের অনুমোদনের দীর্ঘ দশ বছর পর সকল ঝামেলার অবসান শেষে প্রথম বৃহৎ অবজারভেটরি বা হাবল টেলিস্কোপ প্রেরণ সম্ভব হয়। এই পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের জন্য স্পেসে অনেক অবজারভেটরি পাঠানো হলেও নাসার বৃহৎ আকৃতির টেলিস্কোপ মূলত ৪ টি। অন্যান্য মহাকাশ সংস্থারও কিছু টেলিস্কোপ রয়েছে তবে হাবলের মতো কোনোটিই নয়। স্পেস টেলিস্কোপের মানও বিভিন্ন ধরণের যেমন, বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি (গামা-রে, এক্স-রে, আল্ট্রাভায়োলেট, দর্শনীয় আলো, ইনফ্রারেড, মাইক্রো ওয়েভ ইত্যাদি), পার্টিকেল ডিটেক্টর, গ্রেভিটেশনাল ওয়েভের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়।


টেলিস্কোপের বিভিন্ন অংশঃ


টেলিস্কোপের অসংখ্য যন্ত্রাংশ থাকে, যার মাধ্যমে মহাকাশের আলো বিশ্লেষণ করা যায়। মূল কম্পিউটার বাদে এখানে হাবলের মূল কয়েকটি অংশ নিয়ে আলোচনা করা হলো-



  • আয়নাঃ

মহাকাশের আলো যখন টেলিস্কোপে আসে তা প্রথমে প্রাথমিক আয়নাতে প্রতিফলিত হয়ে সামনের সেকেন্ডারি আয়নাতে যায় এবং সেখান থেকে প্রাথমিক আয়নার মাঝের ফুটো দিয়ে ফোকাল পয়েন্ট তৈরীর আগে প্রবেশ করে এবং সেখানে থাকা যন্ত্রাংশে প্রবেশ করে।

  • ক্যামেরাঃ 

হাবলের মূল ক্যামেরা দুইটা, এই দুইটা ক্যামেরা একসাথে কাজ করে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (IR, visible, UV) আলো বিশ্লেষণ করে ওয়াইড ফিল্ড ছবি প্রদান করে।

  • স্পেকট্রোগ্রাফঃ

স্পেকট্রোগ্রাফ নক্ষত্র হতে নির্গত বিভিন্ন উপাদানের বর্ণালি সনাক্ত করতে পারে। প্রিজমের মতো আলোকে ভেঙে তাপমাত্রা, ঘনত্ব, রাসায়নিক উপাদান ও বেগ নির্ণয় করতে পারে।

  • ইন্টারফেরোমিটারঃ

এর মূল কাজ হলো টেলিস্কোপকে স্থির লক্ষ্যে রাখতে সহায়তা করে এবং এটি আলাদা যন্ত্র হিসেবেও কাজ করে। মোট তিনটি ইন্টারফেরোমিটারের দুইটা টার্গেট লক করে এবং একটি নক্ষত্রের উজ্জলতা ও আপেক্ষিক দূরত্ব নির্ণয় করে।

  • সোলার প্যানেলঃ

যাবতীয় বৈদ্যুতিক চাহিদা সোলার প্যানেল মিটিয়ে থাকে এবং ছয়টি ব্যাটারি স্টোর হয়।

  • Gyroscope:

তিনটি সবসময় সহ মোট ছয়টি Gyroscope  টেলিস্কোপের উচ্চতা ও গতি নির্ণয় করে এবং কক্ষপথে থাকতে সহায়তা করে।

  • এন্টেনাঃ

ডেটা ও কমান্ড প্রথমে টেলিস্কোপের দুটি শক্তিশালী এন্টেনা দিয়ে নাসার দ্বিতীয় স্যাটেলাইটে প্রেরণ করা হয় এবং সেখান থেকে ভুমিস্থ কন্ট্রোল সেন্টার ডেটা গ্রহণ ও প্রেরণ করা হয়। 






কয়েকটি বিখ্যাত স্পেস টেলিস্কোপঃ


হাবল টেলিস্কোপ (hubble telescope): টেলিস্কোপের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও পুরোনো টেলিস্কোপ যা ৩০ বছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আমাদের তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। নাসার প্রথম স্পেস অবজারভেটরি যা অস্ট্রোনমিতে নতুন রেভুলেশন এনেছে, মহাবিশ্বের অগণিত বস্তুর আশ্চর্যজনক ছবি তুলেছে, মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তু দেখা সম্ভব হয়েছে হাবল ডিপ ফিল্ড ও আল্ট্রা ডিপ ফিল্ড দিয়ে। ভুমি থেকে ৩৫০ মাইল ওপরে থাকা ৪৪ ফুট দৈর্ঘ্যের ও প্রায় ১৩ টন ওজনের টেলিস্কোপটি প্রায় ২০০০০ কি.মি./ঘণ্টা বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এটি আল্ট্রাভায়োলেট ও ইনফ্রায়েড আলো দেখতে সক্ষম। টেলিস্কোপটি এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যাতে এস্ট্রোনটরা সেখানে যেতে পারে এবং প্রয়োজনীয় রিপেয়ার, পার্টস পরিবর্তন করে টেকনোলজি আপডেট রাখতে পারে। হাবল টেলিস্কোপে নতুনভাবে আলোকপাত করিয়েছে মহাবিশ্বের সীমা, নক্ষত্রের জীবন, ব্লাকহোল এবং প্রথম গ্যালাক্সির গঠন সহ অসংখ্য বিষয়ের। আশা করা যায়, টেলিস্কোপটি আরও কিছু বছর থাকবে এবং উত্তরসূরি জেমস ওয়েভ টেলিস্কোপের মাধ্যমে চির বিদায় নেবে।






চন্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরিঃ 

চন্দ্রা, Subrahmanyan Chandrasekhar এর নামে রাখা হয়েছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এক্স-রে টেলিস্কোপ। এটি হাবল টেলিস্কোপের সাথে মূল ছবির পাশাপাশি এক্স-রে ডিটেক্ট করে। এই টেলিস্কোপ ১০^৬ থেকে ১০^৮  °C পর্যন্ত বস্তুর তাপমাত্রা দেখতে পারে। যখন গ্যাসের অনু গরম হয় আর অত্যন্ত দ্রুত চলার সময় সংঘর্ষ হয় এবং 10 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এক্স-রে ফোটন নির্গত হয়। এই অতি তাপমাত্রা যেখানে উচ্চ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বা অকল্পনীয় গ্রাভিটি বা অভাবনীয় ফোর্স থেকে আসে। এগুলো মহাবিশ্বের অদ্ভুত বস্তু যেমন, কোয়াসার, ক্লাস্টারে উত্তপ্ত বিশাল গ্যাসের কুণ্ডলী, বিস্ফোরিত তারা এবং ব্লাকহোলের ইভেন্ট হরাইজনে বস্তু টেনে নেওয়ার সময় হয়ে থাকে।   

চন্দ্রা এক্স-রে টেলিস্কোপ নতুন যে জিনিস পেয়েছে তা হলো- লুকায়িত ব্লাকহোল, মিল্কিওয়ের নিজস্ব ব্লাকহোল, Sagittarius A*, মার্সের প্রথম ছবি এক্স-রে ছবি।





ফার্মি গামা-রে স্পেস টেলিস্কোপঃ

এই টেলিস্কোপ একটা আলাদা কোনো আয়না ব্যবহার না করে একটি স্পেশাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয় যেটা গামা-রে এর শক্তি ও গতিপথ নির্ণয় করতে পারে। এই টেলিস্কোপ 10 KeV থেকে 300 GeV পর্যন্ত শক্তি শনাক্ত করতে পারে এবং এর বিশাল ফিল্ড অব ভিও রয়েছে। এটি একবারে আকাশের ২০% দেখতে পারে এবং সম্পুর্ন আকাশ মাত্র তিন ঘন্টা। এস্ট্রোনোমাররা এর ফলাফলের ভিত্তিতে ব্লাকহোল, একটিভ গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়াই, ব্লাজারস, গামা-রে ব্লাস্ট ও সোলার ফ্লেয়ার সম্পর্কে গবেষণা করতে পারেন। আর কসমোলজিস্টরা মহাবিশ্বের জন্ম ও প্রাথমিক বিবর্তনগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান।





সোর্সঃ

১ 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Observatory


https://www.nasa.gov/content/goddard/hubble-space-telescope-science-instruments


https://www.space.com/amp/6716-major-space-telescopes.html


https://www.nasa.gov/mission_pages/chandra/astronomy/index.html


https://www.nasa.gov/content/goddard/hubble-history-timeline


https://fermi.gsfc.nasa.gov/


https://lco.global/spacebook/telescopes/space-telescopes/#:~:text=Space%20telescopes%20have%20the%20advantage,reflected%20by%20the%20Earth's%20atmosphere.


https://history.amazingspace.org/resources/explorations/groundup/lesson/eras/space/page2.php




রওনক শাহরিয়ার, 
নভেম্বর,  ২০২০

আর্কাইভ

সমস্যা বা ফিডব্যাক জানাতে যোগাযোগ করুন

প্রেরণ