Space X: মহাশূন্যে প্রথম মানব যাত্রার ইতিকথা।



৩০ মে, ২০২০ প্রায় দুই যুগ প্রচেষ্টার পর Space X মহাকাশে মানুষ পাঠাতে সক্ষম হয়। শুরুটা হয়েছিল পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরী করা দিয়ে, তারপর মহাকাশে গাড়ি প্রেরণ, অরবিটে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা এবং সর্বশেষ নাসা (NASA) এর সাথে চুক্তি অনুযায়ী মহাকাশে মানুষ প্রেরণের উদ্দেশ্য নিয়ে। ২০১১ সালে মহাকাশে নিজ দেশ থেকে নাসা সর্বশেষ মানুষ প্রেরণ করেছিল। Space X এর ক্রু মিশন রাশিয়ার সাথে দীর্ঘদিনের মহাকাশযান পরিচালনার চুক্তির অবসান ঘটায়, এবং দীর্ঘ ছয় বছরের পরিকল্পনা শেষে স্বল্প ব্যয়ে, নিজ দেশ থেকে এক যুগ পর মহাকাশযান উড্ডয়ন করে প্রথম প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে ইতিহাস রচনা করে। আসুন জেনে নেই Space X -এর মূল কাজ কী?




Space exploration technology Corporation (Space X)

হলো একটি আমেরিকান অ্যারোস্পেস প্রস্তুতকারক ও মহাকাশ পরিবহন সংস্থা যার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে Space X এর অর্জন অসংখ্য কিন্তু তাদের চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো অন্য গ্রহ মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য করে তোলা। ইলন মাস্ক তার পরিকল্পনা অনুযায়ী সায়েন্স ফিকশনের বিষয়গুলোকে শুধু বইয়ের মধ্যে নয় বরং বাস্তবে করে দেখাতে চান। তাদের শুরুর দিকটা কঠিন হলেও, পুনঃব্যবহার যোগ্য স্পেস শাটল স্বপ্নের মহাকাশ যাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে ৭৫% পর্যন্ত খরচও কমিয়ে এনেছে। আর নাসার দুই অ্যাস্ট্রোনট মহাকাশে প্রেরণের ঐতিহাসিক কাজ শুধু সফলতাই এনে দেই নি, বরং প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে নিজেদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও নাসার সাথে চুক্তি অনুসারে ISS -এ এখন পর্যন্ত ২০টি কনটেইনার পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও স্পেস এক্স থেকে তার অরবিটে প্রেরণ করা হয়। স্বপ্নের মহাকাশ যাত্রাকে সহজলভ্য করার উদ্দেশ্য বর্তমানে তারা কাজ করে যাচ্ছে।



স্পেস এ মানুষ প্রেরণঃ

স্পেস এ মানুষ প্রেরণের অভিযান অত্যন্ত দুঃসাধ্য ও ব্যয়বহুল কাজ যা আগে চিন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী দপ্তরগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হত। মহাকাশে বিশেষ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS) এ গবেষণা, কার্গো পৌঁছানো, সেখানের কাজের জন্য মানুষের যাওয়া প্রয়োজন। আর নাসা নিজ দেশ থেকে সরাসরি মানুষ প্রেরণ করা বন্ধ করায় এ কাজে এতদিন পুরোপুরি রাশিয়ার ওপর নির্ভর ছিল। সেজন্য প্রাইভেট কোম্পানি 'Space X' এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় 'ISS' এ প্রাথমিকভাবে মানুষ পাঠানোর জন্য। ২০১৬ সালের প্রথম ব্যর্থতার পর ২০২০ সালে পুর্ণদমে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু আবহাওয়া বড়ো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এবার। অবশেষে সকল ঝামেলার অবসান শেষে ৩০ মে 'NASA' এর দুই অ্যাস্ট্রোনট 'Robert Behnken' এবং 'Douglas Hurley' নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে 'Falcon 9' এর 'Crew dragon' ক্যাপসুল এ করে উড্ডয়ন করেন এবং ১৯ ঘন্টা অরবিটে থাকার পর ২৫০ কি.মি. ওপরে থাকা 'ISS' এ ডক করতে সক্ষম হয়। 



পুনঃব্যবহার যোগ্য স্পেস সাটলঃ

পুর্বে মহাকাশযান প্রেরণের পর বিভিন্ন কারণে তা পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব হত না। এতে অত্যন্ত পরিশ্রম, অর্থ অপচয় হত এবং নতুন স্পেস সাটল বারবার পরীক্ষা করায় মহাকাশ যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাত। পুনঃযোগ্য জ্বালানি থেকে পুনরায় ব্যবহার করা যায় পুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান তৈরীর আইডিয়া আসে। Space X সেটাকে বাস্তবায়ন করে এবং প্রতিটা মহাকাশযানের খরচ প্রায় ৭৫% কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়। মূলত মহাকাশযানের দুইটা স্টেজ থাকে, একটা জ্বালানি প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশ। মূলত প্রথম স্টেজের জ্বালানি পুর্ণ রকেট বুস্টারগুলোতেই অতিরিক্ত ব্যয় হয়, যদি একে পুনঃব্যবহার করা সম্ভব হয় তবে বিশাল খরচ বাঁচানো সম্ভব হয়। 'Falcon 9' এর স্পেসক্রাফটের একেকটা বুস্টার সর্বোচ্চ ছয়বারও ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। ইলন মাস্কের পরবর্তী পরিকল্পনা দ্বিতীয় স্টেজকেও পুনঃব্যবহার যোগ্য করে তোলা যেন খরচ একেবারে কমে আসে। 'Space X' এর প্রতিদ্বন্দ্বী 'Blue origin' -ও পুনঃব্যবহারযোগ্য স্পেস সাটল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।



ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলঃ

'Space X' ক্রু ড্রাগন নির্মাণ করে যা এস্ট্রোনটদের 'ISS' পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায় এবং পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে। এটি মহাকাশযানের উপরে পূর্বের কার্গো এর পরিবর্তে রাখা হয় যাকে বুস্টারগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে নির্দিষ্ট অরবিটে পাঠায়। স্পেসক্রাফটটি 'Applo 11' এর মতো হলেও ভিতরে বিলাশবহুল গাড়ির মতো। পূর্বের মতো ২০০০ এর অধিক সুইচ ও সার্কিট এতে নেই, বরং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে যেখানে টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে যানের সব কিছু দেখা, সব তথ্য ও পর্যবেক্ষণ এমনকি স্পেসশিপকে পরিচলনাও সম্ভব। অ্যাস্ট্রোনটরা সব পর্যবেক্ষণ শেষে অটোমেটিক মোডে দিয়ে দেন, যা মহাকাশযানকে সরাসরি স্পেস স্টেশনে নিয়ে ডক করায়।

এবং ৩ মাস পর ২রা আগষ্ট ক্রু ড্রাগনে করে তারা পৃথিবীতে আসার প্রস্তুতি নেয়। ১৮ ঘন্টা মহাশূন্য অরবিটে প্রদক্ষিণ করে ধীরে ধীরে পৃথিবীর দিকে নেমে আসে। বায়ুমন্ডল স্পর্শ করার সময় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫০০° ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছায়। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছালে প্যারাসুট খুলে যায় এবং ধীরে ধীরে ফ্লোরিডা উপকুলে ক্যারিবিয়ান সাগরে পতিত হয়।




কোভিড-১৯ ও মিশনঃ

করোনা প্যানডেমিক জন্য অ্যাস্ট্রোনটদের একটা বিশাল সময় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় যা এর আগে এতো দীর্ঘ কখনও ছিল না। আবার সর্বোচ্চ পরিমাণে চেক করা হয়েছিল যাতে ভাইরাস মহাকাশে পৌঁছাতে না পারে। করোনা ভাইরাসের জন্য সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়েছে।



তথ্যসুত্রঃ

১.

https://www.discovery.com/technology/Reusable-Rockets

২.

https://www.google.com/amp/s/www.theverge.com/platform/amp/2020/5/30/21269703/spacex-launch-crew-dragon-nasa-orbit-successful

৩.

https://www.google.com/amp/s/amp.theguardian.com/science/2020/may/30/spacex-nasa-crewed-spaceflight-launch-dragon-capsule-elon-musk-trump

৪.

https://www.nasa.gov/press-release/nasa-astronauts-launch-from-america-in-historic-test-flight-of-spacex-crew-dragon

৫.

https://en.m.wikipedia.org/wiki/SpaceX

৬.

https://www.google.com/amp/s/www.theverge.com/platform/amp/2020/8/2/21350663/nasa-spacex-crew-dragon-astronauts-bob-behnken-doug-hurley-splash-down


রওনক শাহরিয়ার,
নভেম্বর, ২০২০


আর্কাইভ

সমস্যা বা ফিডব্যাক জানাতে যোগাযোগ করুন

প্রেরণ