মেমরি কার্ড/এসডি কার্ড কীভাবে কাজ করে?
এসডি, মাইক্রো এসডি কার্ড স্টোরেজ এর ক্ষেত্রে দুই যুগের বেশি সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। সময়ের সাথে বিভিন্ন আকৃতির কার্ডগুলো আকার কমেছে, ডেটা স্টোরেজ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে স্ট্যান্ডার্ড একটা আকৃতিতে এসেছে। কিন্তু এই ছোট্ট একটা মেমরি কার্ডে কীভাবে এত এত ডেটা কোনো ইলেকট্রিক ব্যবস্থা ছাড়াই সংরক্ষণ করা যায়, আবার প্রয়োজন মতো ডেটা ট্রান্সফার ও ডিলিট করা যায়?
যখন আমরা কম্পিউটারে কোনো ডেটা নেই সেটা আসকি (ASCII- American Standard Code for Information Interchange) কোডে কনভার্ট হয়ে যায়। কম্পিউটার মূলত ০ বা ১ ছাড়া কোনো কিছু বোঝে না। ডেটা প্রসেসিং, স্টোর সহ সব কিছু এই ০ বা ১ দিয়ে হয়ে থাকে। এখন মেমরি কার্ডে একটি মাইক্রোচিপ থাকে। চিপে ০/১ স্টোর করার জন্য দরকার সুইচ। কারণ ডেটা সবসময় ০ বা ১ অথবা অন বা অফ এ স্টোর হয়ে থাকে। মাইক্রোচিপের সুইচে থাকে অসংখ্য ছোটো ছোটো ট্রান্সজিস্টর। এখন এই ট্রান্সজিস্টরগুলো যেভাবে কাজ করে-
একটা সাধারণ ট্রান্সজিস্টর এ থাকে তিনটা সোর্স। একটি হলো সোর্স যেটা দিয়ে কারেন্ট আসে, আরেকটা হলো ড্রেইন যেটা কারেন্ট বের হওয়ার পথ, আরেকটা হলো গেট যেটা নির্ধারণ করে কারেন্ট গেটে যাবে কি যাবে না। এখানে গেট অন মানে কারেন্ট যাওয়া পথ থাকে বা ১ এবং অফ মানে লো ভোল্টেজ এর কারেন্ট বা ০। এবং সমস্যা হলো যদি এটা কোনো বৈদ্যুতিক সোর্সের সাথে কানেক্টেড না থাকে তবে আউটপুট লো থাকবে বা ডেটা সব নাই হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ডেটা এতে স্টোর থাকে কীভাবে?
মেমরিতে সেজন্য আলাদা ধরণের ট্রান্সজিস্টর ব্যবহার করা হয় যার নাম MOSFETs(মসফেটস)। মসফেটস একটি আলাদা ধরণের ট্রান্সজিস্টর যেখানে গেট থাকে দুইটা। একটি হলো কন্ট্রোল গেট অন্যটি ফ্লোটিং গেট। গেট খোলার পর যখন পজিটিভ চার্জ আসে তখন সোর্স থেকে ড্রেইন পর্যন্ত চার্জ প্রবাহিত হয় এবং কিছু কারেন্ট ফ্লোটিং গেটের ওপরে জমা হয়। এখন মেমরি কার্ড খুলে রাখলেও ডেটা সেখানে স্টোর থাকে এবং পরবর্তীতে ডিভাইসে প্রবেশ করালে স্টোর চার্জ থেকে আবার তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। এখন কম্পিউটারে প্রবেশ করালে অন অফ ট্রান্সজিস্টর দেখে কম্পিউটার ০/১ নির্ধারণ করে এবং ডেটা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে। (নিচের ছবি দেখলে বুঝতে আরও সুবিধা হবে)
তবে ডিলিট করার সময় কী হয়?
মেমরি থেকে কোনো ফাইল ডিলিট করা করলে ঐ কন্ট্রোল গেটে নেগেটিভ চার্জ প্রয়োগ করা হয়। এবং ফ্লোটিং গেটের ওপর আটকে থাকা ইলেকট্রন বের হয়ে যায় এবং ট্রান্সজিস্টর ফাঁকা হয়ে যায়।
বর্তমানের মেমরিগুলোতে কয়েকশো বিলিয়ন এবং 40 ন্যানোমিটারের নিচের ট্রান্সজিস্টর ব্যবহার করা হয়। এগুলো মিলিয়ন থেকে ১০ কোটি বার রিড রাইটের সক্ষমতা রাখে। মেমরি কার্ডের ওপরের একটা শক্ত আবরণের দ্বারা সুরক্ষিত থাকে এবং ৮টি পিন থাকে ডেটা ট্রান্সফারের জন্য। এই ট্রান্সজিস্টরের গতি কিন্তু সবসময় এক রকম নয়। নিচে মেমরির এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
এখন মেমরির ওপরে লক্ষ্য করলে বিভিন্ন ধরণের লিখা পাওয়া যায়। লিখাগুলো মূলত মেমরির মান, ধরণ ও স্পিড সহ বিভিন্ন বিষয় বোঝায়।
মাইক্রো এসডি কার্ড চার ধরণের হয়, এগুলো মূলত মেমরি কত বড়ো সাইজের হতে পারে তা বোঝায়।
আর এই Micro sd standard বাদে বাকিগুলো ডিভাইস কম্পেটিবিলিটি না হলে ভালো কাজ করে না।
Micro Sd standard - এই ধরণের মেমরি কার্ড ২ জিবি পর্যন্ত হতে পারে এবং Fat 12 এবং 16 ফাইল ব্যবহার করা হয়।
Micro SDHC standard - এই ধরণের মেমরী ২জিবি-৩২ জিবি পর্যন্ত হতে পারে এবং fat 32 ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
SDXC standard - এই ধরণের মেমরী কার্ড ৩২-২ টেরা বাইট পর্যন্ত হতে পারে এবং exfat ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়.
SDUC standard - এই ধরণের মেমরি ২-১২৮ টেরাবাইট পর্যন্ত হতে পারে এবং এতেও exFat ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।
মেমরির ওপরে বিভিন্ন ক্লাস নির্দেশ করা থাকে। এই ক্লাস বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে।
Class 2 - এই ধরণের মেমরি কার্ড কমপক্ষে ২ মেগাবাইট/সেকেন্ড রাইট স্পিড পাওয়া যায়।
Class 6 - এই ধরণের মেমরি কার্ড কমপক্ষে ৬ মেগাবাইট/সেকেন্ড রাইট স্পিড পাওয়া যায়।
Class 10 - এই ধরণের মেমরি কার্ড কমপক্ষে ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড রাইট স্পিড পাওয়া যায়।
এর সাথে সম্পর্ক থাকে UHS স্ট্যান্ডার্ড এর। এখানে তিন ধরণের মেমরি পাওয়া যায়।
UHS-1 - এই ধরণের মেমরি কমপক্ষে ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড রাইট স্পিড পাওয়া যায়।
UHS-2 - এই ধরণের মেমরি কমপক্ষে ২০ মেগাবাইট/সেকেন্ড রাইট স্পিড পাওয়া যায়।
UHS-3 - এই ধরণের মেমরি কমপক্ষে ৩০ মেগাবাইট/সেকেন্ড রাইট স্পিড পাওয়া যায়।
এবারে আসা যাক অ্যাপস বা গেমস পারফর্ম্যান্স নিয়ে, যা দুই ধরণের হয়ে থাকে।
Class-1 (A-1) - এই ধরণের মেমরিতে রিড 1500 iops এবং রাইট 500 iops পর্যন্ত হতে পারে।
Class-2 (A-1) - এই ধরণের মেমরিতে রিড 4000 iops এবং রাইট 2000 iops পর্যন্ত হতে পারে।
মেমরি কার্ড এ ভিডিয়ো রাইট স্পিড ক্লাস নির্দিষ্ট থাকে।
কয়েকটি ক্লাস হলো-
V-10 - এই মেমরি কার্ডে রাইট স্পিড কমপক্ষে ১০ মেগাবাইট/সেকেন্ড যা সাধারণ ভিডিয়ো রেকর্ড করতে সক্ষম।
V-30 - এই মেমরী কার্ড এ রাইট স্প্রি কমপক্ষে ৩০ মেগাবাইট/সেকেন্ড যা full HD/4k ভিডিয়ো ধারণে সক্ষম।
মেমরী কার্ডের একটা সুবিধা হলো কোম্পানিগুলো আগে থেকে কার্ডের রিড ও রাইট স্পিড উল্লেখ করে দেই। তবে এইগুলো স্ট্যান্ডার্ড ইনভারমেন্ট টেস্টের ফলাফল। কোন ডিভাইসে মেমরি ব্যবহার করা হয়েছে বা পিসিতে কেমন কার্ড রিডার ব্যবহার করা হচ্ছে বা ডেটা কেবল কোনটা ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন অনেক বিষয়ই রাইট এবং রিড স্পিড এর কম বেশি করে।
সোর্সঃ
1.https://en.m.wikipedia.org/wiki/SD_card
2.https://spectrum.ieee.org/semiconductors/memory/flash-memory-survives-100-million-cycles
3.https://www.sdcard.org/developers/index.html
4.https://www.ntfs.com/fat_systems.htm
5.https://www.explainthatstuff.com/flashmemory.html
6.এবং ইউটিউব
রওনক শাহরিয়ার
আগস্ট, ২০২০
