ওয়্যারলেস চার্জিং এর ইতিবৃত্ত:
Mi Air charger
প্রথমেই সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে জেনে নেওয়া যাক। তা শক্তি কী?
কোন বস্তু বা পদার্থ বা সিস্টেমের কাজ করার ক্ষমতাকে বা সামর্থ্যকে শক্তি বলা হয়। শক্তির বিনাশ নেই, তবে এক রূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হতে পারে।
ইলেকট্রিসিটিও এক ধরণের শক্তি। ইলেকট্রিক চার্জ এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে পৌঁছানো হলো ইলেকট্রিসিটি। একে ওয়াট (Watt) দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
তো শক্তিকে কী কোনো তারবিহীন মাধ্যমে পাঠানো সম্ভব।
অবশ্যই,
সুর্যে প্রতি মুহূর্তেই পৃথিবীতে শক্তি প্রেরণ করছে। মূলত সূর্যই হলো সকল উৎস। এর মান প্রতি বর্গমিটারে প্রায় 250 watt সমতুল্য। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আমরা এই শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তর করে ব্যবহার করতে পারি। অর্থাৎ শক্তি ট্রান্সফার এখানে তারবিহীন মাধ্যমেই হচ্ছে, আর মাধ্যমের জন্য কোনো কিছুর প্রযোজনীয়তা নেই। শুধু রিসিভার(যন্ত্র, গাছ ইত্যাদি) থাকলেই হবে।
আর শক্তি ট্রান্সফার হয় কীভাবে?
শক্তি মূলত আসে হয় তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে। গামা-রে, এক্স-রে, দৃশ্যমান আলো এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। সূর্য থেকে প্রতি মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ ফোটন পৃথিবীতে আঘাত করছে। ফোটন ভরহীন হলেও এর সাথে শক্তি নিয়ে আসে যা উপযুক্ত পদ্ধতিতে (সোলার প্যানেলের মাধ্যমে) বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তর সম্ভব।
প্রচলিত ওয়্যারলেস পদ্ধতি:
ইনডাকটিভ চার্জিং উনবিংশ শতাব্দির শুরুতেই মাইকেল ফ্যারাডের হাত ধরে আসে। নিকোলাস টেসলার হাত ধরে পুর্ণতা আসে। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে স্মার্টফোন ও চার্জার প্যাডে তামার কয়েল থাকে। এই কয়েল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন করে, রিসিভার ফোনের কয়েল ফিল্ডের মধ্যে থাকলে চার্জ হয়। তবে মাত্র ৪ সে.মি. এর মধ্যে এটা কাজ করে। মানে আপনাকে চার্জ দিতে হলে চার্জিং প্যাডের নির্দিষ্ট স্থানে ফোন রেখে দিতে হবে, একটু আসেপাশে হলে চার্জে সময় বেশি দরকার হবে। ভবিষ্যতে প্রজন্মের তারবিহীন কানেকশনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হবে ধারণা করা হয়। যা বাস্তবেও এখন সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে দূরবর্তি চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার অনেক প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে। এটা আগের তারবিহীন এর চেয়ে আলাদা।
মিলিমিটার ওয়েভ প্রযুক্তি মূলত রেডিয়ো তরঙ্গ এন্টেনার মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ডিভাইস এই তরঙ্গ রিসিভ করবে এবং ইলেকট্রিসিতে রুপান্তর করবে।
কিন্তু এই মিলিমিটার ওয়েভ প্রযুক্তি ১৯৬৩ সালে প্রথম চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে সেন্সর তৈরী করা হয় যেটা শক্তি যেদিকে প্রেরণ করতে হবে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হত। Raytheon Goldstone Experiment এ ১ মাইল দূরে ৩২০ kW প্রেরণ করতে পারে। তবে এই প্রযুক্তি খুব একটা সুবিধার নয়।
দূরত্বের সাথে এর চার্জিং স্পিড কমে আসবে।
মোবাইলের চার্জিং এর ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখা গেছে পুর্বেও। তবে কমারশিয়াল ভাবে বাজারে সামান্য কিছু ডিভাইস দেখতে পাওয়া যায়।
চার্জিং স্পিডের ক্ষেত্রে প্রচলিত ডিভাইসের দ্বারা ১-৩ watt এর হয়ে থাকে, মূল ডিভাইসের একেবারে কাছাকাছি থাকলে ১০ watt এর মতো আউটপুট পাওয়া সম্ভব।
উদাহরণ স্বরুপ ১ মিটারে ৯০% চার্জিং স্পিড দিতে পারলেও, ২ মিটারে সেটা ৬০% এ ড্রপ করতে পারে।
আবার স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় 2.5 watt চার্জের দরকার হয়। মানে দূরত্ব বাড়লে মোবাইলে চার্জ হওয়ার হার মোবাইলের ব্যাটারি ব্যবহার হওয়ার চেয়ে বেশি হবে।
আবার যে পরিমাণে বিদ্যুৎ দরকার তার কমারশিয়াল ব্যবহারের জন্য অনেক বেশি অপচয়। কারণ সারাদিন রাতে যে পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ হবে, আর কী পরিমাণের বিদ্যুৎ চার্জে ব্যবহার হচ্ছে তা নির্ভর করে।
আবার ইনফ্রারেড আলোর মাধ্যমে চার্জিং প্রযুক্তিও রয়েছে এর মধ্যে। এখানে মূলত আলো দ্বারা সরাসরি চার্জ করা সম্ভব। দূরত্বের ইফেক্ট তেমন পড়ে না। স্পিডও ভালো পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু আলোক পথে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাথে স্পেশাল কেসিং অথবা ইউএসবি ব্যবহার করার দরকার হয় সংযোগে। যা সত্যিই বিরক্তিকর।
এবার আসা যাক শাওমিকে নিয়ে:
তো, শাওমি আজকে সকালে তাদের টুইটারে ও ফেসবুকে নতুন ওয়ারলেস চার্জিং টেকনোলজির জানান দিয়েছে যা Xiaomi’s Mi Air Charge নামকরণ করা হয়েছে।
তাদের দ্বাবি অনুযায়ী, এটা কোনো প্রকার তার ছাড়াই ঘরের দুরবর্তী কয়েকটা ডিভাইস একসাথে চার্জ করতে সক্ষম।
https://www.facebook.com/250677251634542/posts/3763399703695595/
আপাতত ডিটেইলস হিসেবে এক মিনিটের ভিডিয়ো ও সাইটের সামান্য তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিস্তারিত ভিডিয়ো-
https://youtu.be/xsFHKCcV2rg
এখন এই চার্জিং টেকনোলজি নিয়ে কিছু কথা-
শাওমির এই চার্জিং টেকনোলজি মূলত 5 watt এর। এটা চার্জিং স্টেশন থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত ওয়্যারলেসভাবে চার্জ দিতে সক্ষম। চার্জিং স্টেশন এ ৫ phase এর ইন্টারফেরেন্স এন্টেনা আছে যা ডিভাইস শনাক্ত করবে। আর ডিভাইস শনাক্ত করার পর, একটি phase থেকে নিয়ন্ত্রিত ১৪৪টি এন্টেনা চারিদিকে মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কম্পাঙ্ক ছড়িয়ে দিবে। কিছুটা মোবাইল টাওয়ারের মতো, নির্দিষ্ট ডিভাইসে কানেকশন বজায় রাখবে। শাওমির দাবি অনুযায়ী, মানুষ বা কোনো বস্তু সামনে থাকলেও কানেকশনে বাধাপ্রাপ্ত হবে না।
আর ডিভাইসে সংযোগের জন্য শাওমি "beacon antenna” এবং “receiving antenna array” প্রযুক্তি তৈরী করেছে। আর ১৪টি এন্টেনাযুক্ত রিসিভার রেকটিফায়ার সার্কিটের মাধ্যমে মিলিমিটার ওয়েভকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তর করবে।
ওয়্যারলেস চার্জিং বিষয়টা প্রথম নয়। এর আগেও এই কনসেপ্টের কাজ করা হয়েছে, কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে। প্রতিবারে ফেইলিউর ছিল, সাথে ছিল সমস্যা। দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে চার্জিং স্পিড কমে যাওয়ার হার বেশি। আবার স্পেশাল কেস বা ইউএসবি ব্যবহার করার দরকার ছিল সাথে। আর স্মার্টফোন বাদে প্রতিদিনের ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তবে শাওমি এক ধাপ এগিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কারণ, তারা মোবাইলের ভেতরে আগে থেকে রিসিভার দেবে এবং হোম এপ্লাইএন্সের সকল ডিভাইস তারা বানাই, সেগুলোতেও আলাদা রিসিভার ব্যবহার করবে যেটা আগে কখনও করা হয়নি।
শাওমির প্রকল্প ভবিষ্যতের পথে এক ধাপ এগিয়ে নিবে যদি সফল হয়। পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিগুলো আরও উন্নতর হবে এটাই আশা।
সোর্স:
1.
2.
https://www.xda-developers.com/xiaomi-mi-air-charge-wireless-charging/amp/
3.
4.
5.
6