ভেসে আসা নীল পথিক
২০২১ এর ৯ তারিখ, শুক্রবারের সকাল। প্রতিদিনের মতো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়িতে স্থানীয় মানুষেরা যাতায়াতের সময় হঠাৎ সমুদ্র তীরে এক বিশাল আকৃতির প্রাণীর দেহাবশেষ পড়ে থাকতে দেখে। প্রাণীটা কোনো সাধারণ জীব নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো প্রাণীদের একটা, যার ওজন ১৫০ টন পর্যন্ত হতে পারে। সামুদ্রিক জায়ান্ট এই প্রাণীটি কর্ডাটা পর্বের স্তন্যপায়ী প্রাণী, দলবদ্ধ লভাবে জীবনযাপন করে। ডলফিনও এদের সমগোত্রীয়। মোট ৮৯ প্রজাতির মধ্যে বেশিরভাগই আজ বিলুপ্তির পথে। এই প্রাণীরা Eocene যুগে বা ৪১-৩৯.৯ মিলিয়ন বছর পূর্বে Basilosaurids and dorudontines আদি প্রাণী থেকে উদ্ভব হয়েছে।
বিশাল আকৃতির প্রাণীটির নাম নীল তিমি। এর বিভিন্ন প্রজাতিকে সমগ্র মহাসাগর জুড়ে দেখা যায়। কক্সবাজারে পাওয়া তিমিগুলো Bryde's whale প্রজাতির পূর্ণবয়স্ক তিমি, যা ভারতীয় এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় অধিক দেখা যায়। মানুষের শিকারে তিমিদের হার অনেক কমে যেতে থাকে। যদিও '৮০ এর দশকে আন্তজার্তিকভাবে এর শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে সমুদ্র পাড়ে কিন্তু প্রায়ই মৃত তিমির সন্ধান মেলে। এদেশে গত ৩১ বছরে এমন ১০টি তিমির মরদেহ পাওয়া গেছে বলে তথ্য আছে। বিভিন্ন সময়ে বিশাল সংখ্যক মৃত তিমির সন্ধান পাওয়া যায়। গতবছর অস্ট্রেলিয়ার উপকুলে এমনই ৩৫০টি তিমি মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সাধারণত তিন কারণে তিমি মারা যেতে পারে। প্রথমত, বার্ধক্য। একাকিত্ব, সঙ্গি বা দলনেতা হারিয়ে, ডিকমপ্রেসন সিনেসের জন্য মারা যায়। দ্বিতীয়ত, আঘাত বা ধাক্কা। গভীর সমুদ্রে বড়ো ফিশিং জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে। সাগরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাছ ধরার সময় হার্ট অ্যাটাক বা আঘাতেও তিমি মারা যেতে পারে। তৃতীয়ত, প্লাস্টিক কন্ট্রামিনেশন; পলিথিন বা প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য, যা তিমির খাদ্য নয়, তা খাদ্যনালিতে আটকে গেলে তিমি মারা যেতে পারে।
হিমছড়িতে সকালে ভেসে আসা তিমিটির ওজন প্রায় দশ টন। লম্বায় ৪৬ ফুট ও প্রস্থে ১৮ ফুট। অবাক করার মতো বিষয় হলো, পরেরদিনই এক কি.মি. দূরে দরিয়ানগড় সমুদ্রসৈকতে আরেকটা একই ওজনের তিমি ভেসে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা তিমিটির নমুনা সংগ্রহ করেছেন কারণ জানার জন্য। কিছুদিন আগের রিপোর্টে জানা যায়, হিমছড়িতে ভেসে আসা তিমিটি মহিলা তিমির দেহ। আর দরিয়ানগড়ে তিমিটি পুরুষ তিমি। দ্বিতীয় তিমিটি প্রথমটির চেয়ে আগে মারা গিয়েছে। প্রচুর দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল বলে স্থানীয়রা জানা। ধারণা করা হয়, পুরুষ তিমিটি আরও এক সপ্তাহ আগে মারা গিয়েছিল কোমো জাহাজের ব্লেডে আঘাতে। আর মহিলা তিমিটি পুরুষ তিমিটির শোকে মারা যায়।
মৃত তিমিদের বেশি সময় সেখানে রাখা হয়নি। কারণ মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে এটা। বনবিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রুত সময়ে মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। তিন পর মাস সম্পূর্ণ পঁচে গেলে এর হাড় বের করে জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মিউজিয়ামে একটি এবং ওশানোগ্রাফিক সেন্টারের মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হবে ভবিষ্যৎ গবেষণা ও প্রদর্শনীর জন্য।
সুন্দরবন থেকে ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের দিকে গেলেই দেখা মেলে নীল জলরাশির বিস্তীর্ণ রাজ্য ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’, ২০০০ কি.মি. গভীর স্থানটি একটি সামুদ্রিক প্রাণীদের অভয়ারণ্য। সেখানে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি তিমি ও ডলফিনেরও বিচরণ রয়েছে।
সোর্সঃ
https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/04/11/1022693
https://www.dawn.com/news/1581325
https://www.google.com/amp/s/m.bdnews24.com/amp/samagrabangladesh/detail/home/1878547
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bryde%27s_whale
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2882820971960727&id=2207727172803447