সমুদ্র লবণাক্ত হওয়ার কারণ!

সমুদ্রের লবণ।
ছবিঃ ThoughtCo
পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ৩ ভাগ সুপেয়। আর বাকি ৯৭% ই নোনা বা লবণাক্ত পানি। এই ৯৭% পানি আবার পৃথিবীর ৭০ ভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে। বিশাল সমুদ্রগুলোই এই লবণাক্ত পানির সবচেয়ে বড়ো উৎস। সমুদ্রে প্রতি এক কেজি পানিতে প্রায় ৩৫ গ্রামের মতো লবণ থাকে। সংখ্যা দেখতে কম হলেও সমুদ্রে প্রতি কিউবিক মাইলে ১২ কোটি টন লবণ থাকে! আর সমুদ্রের তো আয়তন ৩৩২,৫১৯,০০০ কিউবিক মাইল!!!
তাহলে এত বিশাল পরিমাণে লবণের উৎস কী?
লবণ সমুদ্রে আসে দুই উৎস থেকে, একটি হলো ভুমি থেকে অন্যটি সমুদ্রের তলদেশ থেকে।
ভুমি থেকেই সবচেয়ে বেশি লবণ এসে থাকে। বৃষ্টি যখন বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসে, তখন বায়ুতে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সাথে মিলিত হয় এবং পানি তখন কিছুটা এসিডধর্মী হয়ে যায়। তারপর পানি ভুমি দিয়ে প্রবাহিত হয়, বৃষ্টির এই পানি পাথর ক্ষয় করে এবং পাথর থেকে সামান্য পরিমাণে লবণ ও কিছু দ্রবীভুত খনিজ পদার্থ আয়নরূপে পানির সাথে যুক্ত হয়। এই সময়েও পানি বিশুদ্ধ থাকে কারণ যেটুকু লবণ থাকে তা পানিকে খাওয়ার অযোগ্য করে না। প্রবাহের এই ধারা নদী বয়ে শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ বৃষ্টির পানিই সমুদ্র গিয়ে পৌঁছাতে পারে। দ্রবীভুত আয়নের অনেকাংশ সমুদ্রের জীবেরা ও উদ্ভিদসমুহ ব্যবহার করে এবং পানি থেকে দূরীভূত করে। বাকিগুলো অপসারিত হয় না এবং মিলিয়ন বছর ধরে জমা হয়ে ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।
দুইটা আয়ন যেটা বেশিরভাগ সমুদ্রের পানিতে উপস্থিত তা হলো ক্লোরাইড ও সোডিয়াম। মোট আয়নে থেকে এই দুইটা ৯০% এর বেশি এই দুটো থাকে। সাথে সামান্য পরিমাণে সালফার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকে।
লবণের আরেকটি উৎস হলো হাইড্রোথার্মাল ফ্লুয়িড যা সমুদ্র তলদেশের ফাটল/গর্তসমূহ থেকে আসে। সমুদ্রের পানি তলদেশের এই ফাটলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং পৃথিবীর কোর থেকে আসা ম্যাগমা দ্বারা উত্তপ্ত হয়। এই উত্তাপ একের পর এক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে থাকে। এই সময় পানি থেকে অক্সিজেন, ম্যাগনেসিয়াম, সালফেটস হারাতে থাকে এবং আসে পাশের পাথরগুলো থেকে লোহা, জিংক, কপারের মতো ধাতব যোগ হতে থাকে। অতঃপর ফাটল থেকে বের হয়ে আসা এই গরম পানি সমুদ্রের উপরিভাগে ওঠে আসে, এই ধাতব পদার্থসহ। কিছু সামুদ্রিক লবণ অগ্ন্যুৎপাতের জন্য ওপরে উঠে আসে যেটা সমুদ্রে সরাসরি খনিজ পদার্থ ছেড়ে দেয়।
এছাড়াও Salt Dome (স্লট ডোম) সমুদ্রের লবণাক্ততা বাড়াতে সাহায্য করে। এই ডোম/গম্বুজগুলোতে ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে বিশাল পরিমাণে লবণযুক্ত, যা পৃথিবী জূড়ে মাটি বা সমুদ্রের তলদেশে দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ কর মেক্সিকোর উত্তর উপকূলে এমন ডোম আছে।
আর এভাবেই প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে থেকে সমুদ্রে লবণ যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।
https://www.google.com/amp/s/www.britannica.com/amp/story/why-is-the-ocean-salty